সাতক্ষীরার শ্যামনগরে মীরগাং টহল ফাঁড়ির বনকর্মীদের উপর হামলার চেষ্টা চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে ফাঁড়িতে ফেরার পথে উপজেলার হরিনগর বাজার সংলগ্ন পাউবো’র বাঁধের উপর ঘটনাটি ঘটে। এসময় মীরগাং টহল ফাঁড়িতে কর্মরত বনকর্মীরা ভিন্ন পথে অপর একটি নৌযান নিয়ে চুনকুড়ি টহল ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। হামলার ঘটনায় জড়িতরা স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। একদিন আগে সুন্দরবনের মধ্য থেকে জবাইকৃত হরিণ উদ্ধারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিকারীদের পক্ষ নিয়ে তারা বনকর্মীদের উপর হামলার চেষ্টা চালায় বলে দাবি তাদের।
মীরগাং টহল ফাঁড়ির ওসি গোলাম কিবরিয়া জানান, রোববার রাতে তারা সুন্দরবন থেকে একটি জবাইকৃত হরিণ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করে উদ্ধারকৃত হরিণ জমা দিতে সাতক্ষীরা আদালতে যায়। সারাদিনের কার্যক্রম শেষে সাতক্ষীরা থেকে ফেরার পথে রাত ৯টার দিকে অফিসে ফেরার পথে ১৬/১৭ জন যুবক তাদের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। এসময় তারা চুনকুড়ি টহল ফাঁডির ওসির সহায়তা নিয়ে ভিন্ন পথে পালিয়ে জীবনে রক্ষা পান।
গোলাম কিবরিয়া আরও জানান, উদ্ধারকৃত হরিণ নিয়ে সাতক্ষীরা যাওয়ার পর একদল যুবক বনকর্মীদের সহায়ক সংগঠন সিপিজি দলের সদস্য পরিমল মন্ডলের বড় ভেটখালী গ্রামের বাড়িতে হামলার চেষ্টা করে। এসময় আনিছুর, সাহেব আলী, আব্দুর রহিমসহ ১০/১২ জন পরিমলের স্ত্রী সন্তানদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ হুমকি দেয়।
তিনি দাবি করে বলেন, উদ্ধারকৃত হরিণ নিয়ে স্থানীয় দুই যুবককে পালাতে দেখেছিলেন। হরিণ উদ্ধারের পর সংগত কারনে আসামি হওয়ার ভয় থেকে তারা বনকর্মীদের ‘টার্গেট’ করে হামলার চেষ্টা করছে। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছন বলে জানান।
স্থানীয় গ্রামবাসী আবুল খায়ের জানান, হামলার নেতৃত্বে ছিলেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু জাবের মোড়লের ভাগ্নে বিএনপি কর্মী আনিছুর রহমান। এছাড়া যুবদল কর্মী সাহেব আলী ও আবিয়ারসহ চুনকুড়ি ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী আব্দুর রহিম নিজেদের কর্মী সমর্থকদের জড়ো করেছিলেন হামলার জন্য।
আবুল হোসেনসহ মীরগাং গ্রামের কয়েকজনের দাবি সাত/আট দিন আগে চুনকুড়ি টহল ফাঁড়ির সদস্যরা বন থেকে হরিণ শিকারের জন্য পেতে রাখা শতাধিক ফাঁদ উদ্ধার করে। ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে চিহ্নিত হরিণ শিকারী আনিছুর ও তার লোকজন দুই দিন আগে বনবিভাগকে ফাঁদ উদ্ধারে সহায়তাকারী ছোট নামের এক শ্রমিককে বেপরোয়া মারধর করে।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী রেঞ্জার হাবিবুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা থেকে ফেরার আগেই হরিণ উদ্ধারের সাথে জড়িতদের উপর হামলার বিষয়ে তারা হুমকি পেয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে বিষয়টি তিনি থানা পুলিশকে অবহিত করে তাদেরকে একটি সাধারণ ডায়েরি করে আসার পরার্মশ দেন। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সারাদিনের দৌড়ঝাঁপে সহকর্মীরা ক্লান্ত থাকার কারণে পরবর্তী দিনে বিষয়টি পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বিএনপি কর্মী আনিছুর রহমান জানান, তিনি সুন্দরবনে যাতায়াত করেন না। তারপরও তাকে জড়িয়ে বনকর্মীরা মিথ্যা অভিযোগ দেয়ায় তিনি লোকজন নিয়ে তাদের সাথে শোনাবোঝার চেষ্টা করেছিলেন। পরিমলের বাড়িতে তথ্য নেয়ার জন্য যাওয়া হলেও তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
খুলনা গেজেট/ টিএ